২১ জুন (শনিবার) বাউল হেলাল উদ্দিন লোক উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে দিনব্যাপী হেলাল উদ্দিন লোক উৎসব-২০২৫ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের বার বার নির্বাচিত কাউন্সিল রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী।
সিলেটের বিয়ানীবাজার একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এলাকা, যা অনেক গুণীজন ও পণ্ডিত ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত। যেখানে অনেক কবি, লেখক, ও শিক্ষাবিদ জন্মগ্রহণ করেছেন বা তাঁদের কর্মস্থল ছিল।
যেখানে বাউলসংস্কৃতি এবং সুফিবাদী ভাবধারার চর্চা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। যদিও এই অঞ্চল বাংলাদেশের অন্যান্য অংশের মত বিশাল বাউল জনসমাজ নিয়ে বিখ্যাত নয়, তবুও এখানে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বাউল সাধকের অস্তিত্ব ছিল, যাঁরা লোকসংগীত, মরমী ভাবধারা ও আধ্যাত্মিক চর্চার মাধ্যমে জনগণের মাঝে প্রভাব বিস্তার করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের বিশিষ্ট গীতিকার, সুরকার, বাউল শিল্পী হেলাল উদ্দিন।।
লোকসাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাউল দর্শনের প্রাণপুরুষ, বিয়ানীবাজার উপজেলার গর্ব, মরমী সাধক ও বিশিষ্ট বাউল শিল্পী হেলাল উদ্দিন -এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে সিলেটের সংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, প্রবাসী বৃন্দ, সংগীত অনুরাগী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এর পক্ষ থেকে এক অনন্য লোক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো তাঁর সাধনজীবন, সংগীতচর্চা ও মানবধর্মের বাণী নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। তিনি ছিলেন শুধু একজন শিল্পী নন, বরং একজন পথপ্রদর্শক, যাঁর গান ও দর্শন মানবতার জয়গান গেয়েছে।
বাউল হেলাল উদ্দিন লোক উৎসব আহবায়ক কমিটির প্রধান আহ্বায়ক শিল্পী এস এম মানিক, সদস্য সচিব, জাহেদ সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন,উৎসবে বাউল হেলাল উদ্দিনের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন বিশিষ্টজনেরা। পাশাপাশি হেলাল উদ্দিনের শিষ্য, অনুরাগী ও স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর গান পরিবেশন করবেন দেশের জনপ্রিয় শিল্পীরা।
বাউল হেলাল উদ্দিন লোক উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক শিল্পী এস এম মানিক বলেন, বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভূক্ত গীতিকার এবং সিলেট বেতারে পল্লীগীতির বিশেষ শ্রেণীর শিল্পী মরমী কবি মোঃ হেলাল উদ্দিন ১৯৬০ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের কামার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন। পিতা মসদ্দর আলী, মাতা রুপেজা বিবি। হেলাল উদ্দিন শৈশব থেকেই লোকসঙ্গীতের প্রতি দুর্বল ছিলেন বিধায় অল্প বয়সে প্রখ্যাত গায়ক মুজিবুর রহমান সরকারকে উস্তাদ হিসেবে গ্রহণ করে। মুজিবুর রহমান সরকারের পাশাপাশি আলী হোসেন সরকার এবং মনিবুর রহমান সরকারের নিকট তত্ত্ব মরমী গানের তালিম নেন। মুজিব সরকার, আলী হোসেন সরকার, এবং মনিবুর রহমান সরকারের নিকট তালিম নিয়ে হেলাল উদ্দিন হয়ে উঠেন সত্যিকারের একজন মরমী সাধক।
তিনি বিভিন্ন সময় মুজিবুর রহমান সরকার, আলী হোসেন সরকার, ক্বারী আমির উদ্দিন, আব্দুল হামিদ, সফিকুন্নুর, রুহি ঠাকুর প্রমুখ লোককবিদের সথে গান গেয়ে বিশেষ করে মালজোড়া গানের জন্য সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পরিচিতি লাভ করেছেন। এই পরিচিতি লাভের মাধ্যমে ভক্তদের আমন্ত্রণে ভারতের বিভিন্ন স্থানে গান গাইতে গিয়েছেন একাধিকবার। বিভিন্ন সময় চ্যানেল এস, ইটিভি (একুশে টিভি) তে গান গেয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। এছাড়াও বিশটি অডিও ক্যাসেটে গান কন্ঠ মিলিয়েছেন। মরমী কবি মোঃ হেলাল উদ্দিন দীর্ঘ চার দশক সঙ্গীত সাধনা করে রচনা করেছেন পাঁচ শতাধিক তত্ত্ব গান। তবে কোন গীতি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। প্রথম মোঃ হেলাল উদ্দিনের ৩০০টি গান নিয়ে গীতি সংকলন ‘বাউল মন’ সম্পাদনা করেছেন ফারুকুর রহমান চৌধুরী।
আপনার মতামত লিখুন