আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রমজান শুরুর আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে পাঠানো এ চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের সরকারি আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো।
চিঠিটি পাঠানো হয়েছে বুধবার (৬ আগস্ট), যা প্রধান উপদেষ্টার পূর্বঘোষিত বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় এসেছে। এর আগের দিন, মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) “জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস” উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস জানান, “আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হবে।”
নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা গত মঙ্গলবার ভোট আয়োজনের ব্যাপারে যে বার্তা দিয়েছেন, তা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করছি, তার দপ্তর থেকে প্রেরিত চিঠি দ্রুত হাতে পাব। যদিও চিঠি পাওয়ার আগেও আমরা নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু করেছি।”
সিইসি আরও জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট অনুষ্ঠিত হলে তার দুই মাস আগে অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে নির্দিষ্ট ভোটের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পরই সেই অনুযায়ী তফসিল দেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে ইসি সচিবকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে ‘অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর’ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন যেন প্রয়োজনীয় সব প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, বিগত পনের বছরে নাগরিকরা ভোটাধিকার প্রয়োগে যে সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হয়েছেন, তা থেকে উত্তরণের একটি সুযোগ এনে দিতে পারে এই নির্বাচন।
চিঠিতে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকও তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, “নির্বাচন শুধু একটি সাংবিধানিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি নাগরিকদের জন্য একটি আনন্দঘন ও গণতান্ত্রিক উৎসব। সে আলোকে ভোটার উপস্থিতি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, আন্তরিক সৌহার্দ্য ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি স্মরণীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যাশা করছি।”
সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার অন্তর্বর্তী সরকার।
এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ইভিএম ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত উপকরণ প্রস্তুত রাখার কাজ চলমান রয়েছে। নির্বাচন-সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন করতে চায় সংস্থাটি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন প্রেক্ষাপটের সূচনা হতে যাচ্ছে এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে—যেখানে দীর্ঘদিন পর একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।