Header Logo
Author বার্তা বিভাগ - সকালের দেশ এডমিন
তারিখ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৩ অপরাহ্ণ

‘নতুন কোনো গডফাদার হতে দেওয়া হবে না’—নাহিদ ইসলামের হুঁশিয়ারি

News Image

বাংলাদেশে আর কোনো ‘গডফাদার’ জন্ম নেবে না—এ হুঁশিয়ারি দিয়ে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত এক রাজনৈতিক সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “স্বৈরাচার, মাফিয়াতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও গডফাদারতন্ত্রের অবসান ঘটাতে হবে। দেশের জনগণ এখন আর কারও ভয়ে থেমে থাকবে না।”

শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে শহীদ দৌলত ময়দানে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “কক্সবাজার একসময় ছিল সন্ত্রাস ও মাদকের অভয়ারণ্য। নারায়ণগঞ্জের মতো এখানেও গডফাদারতন্ত্র বিরাজ করত। ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদে এসব গড়ে উঠেছিল। তবে এখন সেই সময় শেষ। আমরা আর কোনো নতুন গডফাদারকে জন্ম নিতে দেব না।”

পদযাত্রা কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দুপুর ১টায় শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ দৌলত ময়দানে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে স্লোগানে মুখরিত পরিবেশে মিছিলকারীরা পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন। পদযাত্রার স্লোগান ছিল, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ প্রভৃতি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের রক্তের সিঁড়ি বেয়েই আমাদের দাবি আদায় করতে হবে। আমরা ঘোষণা দিয়েছি—জুলাই মাসের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই সনদ’ দিতে হবে। পিআর পদ্ধতি নিয়ে কে বোঝে আর কে বোঝে না, তা নিয়ে সংস্কার আটকে থাকবে না। জনগণ সংস্কার চায়, জনগণই ঠিক করবে পরিবর্তনের গতি।”

তিনি আরও বলেন, “উচ্চ কক্ষ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশন ও দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানসমূহে নিরপেক্ষ নিয়োগের জন্য একটি সাংবিধানিক কমিটি গঠন জরুরি। এই সংস্কারই হবে দেশের অগ্রগতির মাইলফলক।”

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে এনসিপি নেতা বলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তাদের স্থায়ীভাবে রাখা যাবে না। কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব।”

তিনি এ বিষয়ে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসসহ আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, “আমরা বিশ্ব বিবেকের প্রতি আহ্বান জানাই—রোহিঙ্গা ইস্যু দ্রুত সমাধান করুন। তাদের দেশে সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।”

এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “শেখ হাসিনা নোবেল পুরস্কারের আশায় লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কক্সবাজারের জনগণের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়েছে। তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিকল্প নেই।”

পদযাত্রা ও সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব এসএম সুজা, অনিক রায়, সংগঠক রায়হান কাশেম, সাবরিনা রহিমা প্রিয়া, জিনিয়া শারমিন এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশ শেষে জুলাই পদযাত্রার বহর বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে ঈদগাঁও, চকরিয়া, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার বিভিন্ন স্থানে পথসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করি। আমাদের লড়াই একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য। ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে আমরা ‘জুলাই সনদ’ আদায় করেই ছাড়ব।”

Watermark