জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, ভাঙচুর ও প্রাণহানির ঘটনায় উত্তপ্ত গোপালগঞ্জ পরিস্থিতি ক্রমেই নতুন মোড় নিচ্ছে। সংঘর্ষে নিহত, গুলিবিদ্ধ এবং আহতদের ঘটনা তদন্তে প্রশাসনিক তৎপরতা জোরদার করার পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুরে এনসিপির মিছিলে হামলা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক আতাউর পিয়ালসহ মোট ৭৫ জনের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও প্রায় ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এই মামলার বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান জানান, সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা একটি পুলিশ ভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে এবং বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গুলি চালায়।
এই সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। তাঁরা হলেন—টুঙ্গিপাড়ার সোহেল মোল্লা, থানাপাড়া এলাকার রমজান কাজী, সদর উপজেলার আড়পাড়ার ইমন তালুকদার এবং যুবলীগের নিষিদ্ধ ঘোষিত এক সদস্য দীপ্ত সাহা।
এনসিপির নেতারা দাবি করেছেন, তাঁদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা সৃষ্টি করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা। এর জেরে পুলিশও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, ফলে পুরো শহর একসময় যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
সহিংসতার ঘটনার পর বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়, যদিও বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল রাখা হচ্ছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে এই সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, “দেশে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে।” বিবৃতিতে গোপালগঞ্জে এনসিপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক থাকলেও টহল কার্যক্রম এবং নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় ফিরছেন, তবে উদ্বেগ এখনো পুরোপুরি কেটে যায়নি।