Header Logo
Author বার্তা বিভাগ - সকালের দেশ এডমিন
তারিখ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৯ অপরাহ্ণ

নির্বাচনী নির্দেশনায় সন্তুষ্ট ফখরুল, সীমান্ত হত্যা নিয়ে উদ্বেগ

News Image

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিই এখন বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতির যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটিকে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, বিএনপি জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখতে চায় না। বরং এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে মূল্যায়ন করেই দলটি ‘জুলাই সনদ’-এর সুপারিশপত্র সরকারের কাছে জমা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতির নির্দেশনার জন্য। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ। দেশের জনগণ ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাই আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা সংস্কারকে স্বাগত জানাই। কিন্তু কেউ যদি বলে, বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, তাহলে সেটা ভুল ব্যাখ্যা। গত ১৭ বছরে প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে, ২০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় না। যারা এই বাস্তবতা অস্বীকার করছেন, তারা গণতন্ত্রের দিকেই চোখ বন্ধ করে আছেন।’

মির্জা ফখরুল আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী সামনে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে, যেখানে দেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।’

সীমান্ত পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা হচ্ছে, পুশইন চলছে। এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দরকষাকষি করতে হবে। একইসঙ্গে ন্যায্য পানির প্রাপ্তি নিয়েও ভারতের সঙ্গে আন্তরিক আলোচনার দাবি জানাই।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ ধরনের শুল্ক আরোপ পোশাকশিল্পকে মুখ থুবড়ে ফেলতে পারে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য বড় সংকট তৈরি করবে। সরকারকে অবশ্যই এই বিষয়ে গুরুত্বসহকারে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘স্বৈরাচার চলে গেলেও তার মানসিকতা এখনো সমাজে রয়ে গেছে। তরুণ নেতৃত্বের কেউ কেউ বলছেন—‘অমুক না হলে তমুক হবে না’। এই মনোভাব আর স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ এক ও অভিন্ন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে—এই ভাষা গণতান্ত্রিক সমাজের নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এই বিজয় ধরে রাখতে প্রয়োজন ধৈর্য ও সহনশীলতা। জনগণ সব দেখছে—তাদের বোকা ভাবা ঠিক হবে না। অতীতে যারা এই ধরনের দম্ভোক্তি করেছেন, তারা আজ ইতিহাসে নেই। বাংলার মানুষ এসব কখনো মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না।’

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার আলোচনা সভায় তার বক্তব্যের শুরুতে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে নির্যাতিত হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, মামলার ভারে ভারাক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।’ তিনি এ সময় ‘জুলাই বাংলাদেশ’ শিরোনামের নিজের লেখা কবিতা পাঠ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহ-সভাপতি একেএম মহসিন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান প্রমুখ।

অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম একই দিনে মাগুরায় এক পথসভায় বলেন, ‘জুলাই সনদ ঘোষণার আগে কোনো নির্বাচন ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।’ তিনি জানান, ‘বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের নতুন সংবিধান প্রয়োজন। নতুন সংবিধান আমাদের দাবি। মৌলিক সংস্কার নিয়ে এখনও টালবাহানা চলছে।’ নাহিদ ইসলাম ৩ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ দেখতে চান বলে উল্লেখ করেন।

Watermark