জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। সংলাপে অংশ নেওয়া প্রায় সব দলই এই দুটি বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের একাদশ দিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
অধ্যাপক রীয়াজ জানান, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বর্তমান পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি রয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতিকে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে সংবিধানে এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এ নিয়োগে জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে না জ্যেষ্ঠ দুইজনের মধ্যে থেকে কেউ হবেন—এ নিয়ে দ্বিমত এখনো বিদ্যমান, তাই এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে।
বৈঠকে আলোচনায় আসে জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদও। অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ৭ জুলাইয়ের আলোচনায় এই অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে একমত হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলো। নতুন আলোচনায় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দটি বাতিল করা এবং জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন সংযুক্ত করার প্রস্তাব তোলা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি অভিন্ন অবস্থান গড়ে উঠছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিটি দল এমন একটি সরকারব্যবস্থার পক্ষে, যা কার্যত ত্রুটিমুক্ত এবং দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের চেতনাকে প্রতিফলিত করে। এই বিষয়ে স্পষ্ট প্রস্তাব আনা হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ বৈঠকে আরও পরিষ্কার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
এ বৈঠকে কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার অংশ নেন।
অধ্যাপক রীয়াজ আশাবাদ ব্যক্ত করেন, জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে একটি খসড়া জাতীয় সনদ প্রণয়ন সম্ভব হবে।