জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ক্রমেই প্রকাশ্যে আসছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, এনবিআরের দুই কমিশনারসহ আরও পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তারা অনুসন্ধান শুরু করেছে।
দুদকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অনুসন্ধানের আওতায় আনা কর্মকর্তারা হলেন বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, ঢাকা পূর্ব কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, আয়কর বিভাগের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা, উপকর কমিশনার মো. মামুন মিয়া এবং কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ।
অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের মহাসচিব হিসেবে পরিচিত। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক আন্দোলনের জেরে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি করতে এই অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে তাদের সন্দেহ।
দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং এনবিআরের কর্মকর্তা একসঙ্গে মিলে নির্ধারিত করের পরিমাণ কমিয়ে নিজেদের লাভবান করছেন। ফলে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আরও অভিযোগ উঠেছে, অনেক করদাতা নির্ধারিত সময়ের আগে কর দেন বা বেশি টাকা জমা রাখেন। নিয়ম অনুযায়ী, নিরীক্ষা শেষে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার বিধান থাকলেও করদাতাদের সেই টাকা তুলতে গিয়ে দিতে হচ্ছে ঘুষ বা উপহার। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কর ফেরতের সুযোগে নিজেদের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছেন।
এ ছাড়া কিছু কর্মকর্তা ঘুষ না পেয়ে কর ফাঁকির মিথ্যা মামলা করে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দুদক আরও জানিয়েছে, এর আগে চার দিনে এনবিআরের সদস্য, কমিশনারসহ উচ্চ পদমর্যাদার মোট ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন এনবিআরের সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারসহ অনেকেই, যাঁরা এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন।
গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে কর্মরত থেকে কিছু এনবিআর কর্মকর্তা শুল্ক, ভ্যাট এবং ক্ষেত্রবিশেষে আয়কর ফাঁকির সুযোগ তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এতে রাষ্ট্রের রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে, সরকার গত ১২ মে মধ্যরাতে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছিল। এর প্রতিবাদে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আন্দোলনে নামে এবং ২৫ মে সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করে। যদিও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে এখনও অনড় রয়েছেন।