Header Logo
Author বার্তা বিভাগ - সকালের দেশ এডমিন
তারিখ: ২৬ মে ২০২৫, ০৭:৪১ অপরাহ্ণ

সিংগাইরে যুবদল নেতার জমি দখল করে বিএনপি নেতার রেস্টুরেন্ট নির্মাণ !

News Image

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ বাসস্ট্যান্ডে যুবদল নেতার জমি দখল করে আনোয়ার হোসেন নামের এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে পাকা স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ।
অভিযুক্ত ওই নেতা জয়মন্টপ ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক এমপি, ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খাঁন শান্ত’র অনুসারী বলে জানা গেছে। সোমবার সরেজমিনে জানা যায়, জমি দখলকারী আনোয়ার হোসেন ওই এলাকার মৃত ছকেল উদ্দিনের ছেলে । তিনি জয়মন্টপ পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পার্শ্বে নীলটেক মৌজায় আরএস ৮৭ দাগে মাত্র ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে তিন তলা ভবন নির্মাণ করে বসবাস করছেন। পাশের অন্যের জমিসহ দখল করেছেন ১০ শতাংশের অধিক পরিমান জায়গা । দখলে নেয়া ওই জায়গায় পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন জনৈক আবু জাফরের কাছে । জাফর সেখানে পিৎজা বার্গার অ্যান্ড পার্টি সেন্টার নামের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা গড়ে তুলেছেন । বিনিময়ে বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন ভাড়া বাবদ তার কাছ থেকে আদায় করছেন মাসিক ৮ হাজার করে টাকা।
অন্যদিকে, আনোয়ারের জোরপূর্বক দখল করা ওই জমির বৈধ মালিক ভুক্তভোগী ইদ্রিস আলী ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ও নীলটেক গ্রামের আরজুত আলীর ছেলে। আদালত ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হয়েও তিনি পাননি কোনো প্রতিকার। সকল বাঁধা নিষেধকে থোরাই কেয়ার করে প্রভাব খাটিয়ে আনোয়ার হোসেন ওই জায়গা দখল করেছেন বলে স্থানীয়রা জানান।
তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, আনোয়ার হোসেন ওই দাগে মাত্র সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমির মালিক। তার জমিতে সে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বসবাস করছেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তার বিল্ডিংয়ের পশ্চিম পাশ ঘেষে আরো ৫ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে স্হানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি দলের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জয়মন্টপ বাসস্ট্যান্ডের একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, আমরা জানি ওখানে আনোয়ার হোসেনের জমি সাড়ে ৫ কিন্তু উনি দখলে আছেন ১০ শতাংশের বেশী। সেখানে ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, গত বুধবার জমির মালিক ইদ্রিস আলী বাদী হয়ে সিংগাইর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বরাবর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি ওই জমি ফিরে পেতে এবং অবৈধ দখলদার আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবীও জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, আমি আরএস ৮৭ দাগে ২৫ শতাংশের কাতে পাঁচ শতাংশ জমির বৈধ মালিক। আনোয়ার হোসেন আমার ওই জায়গা দখল করতে গেলে আমি চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা করি। আদালত আমার পক্ষে রায় দেন। রায় অনুযায়ী আদালত কমিশন গঠন করে যার যার অংশ ব্লকে ভাগ করে দেন। সে আদেশ অমান্য করে ওই জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দেন আনোয়ার।
অভিযুক্ত মো. আনোয়ার হোসেন জমি দখলের কথা অস্বীকার করে বলেন, রেস্টুরেন্টের জায়গাসহ ওখানে আমার পৌনে ৬ শতাংশ জায়গা । আমি ভবন নির্মাণ করে বাকিটুকুতে ঘর তুলে রেস্টুরেন্টের কাছে ভাড়া দিয়েছি। এর আগে ঘটনাস্থলে কমিশন এসেছিল আমার পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছে।
সিংগাইর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হোসেন বলেন, কাগজপত্র নিয়ে সামাজিকভাবে বসে দেখা গেছে ওই জায়গার প্রকৃত মালিক মো. ইদ্রিস আলী। আনোয়ার হোসেন জোরপূর্বক দখলে নিয়ে পাকা স্থাপনা করে রেস্টুরেন্টের কাছে ভাড়া দিয়েছে।
সিংগাইর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি ও স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুল আলম খান (মোহাম্মদ আলী) বলেন, জায়গাটা আগে থেকেই আনোয়ারের দখলে। ইদ্রিস নাকি ক্রয় করেছে এটাও ঠিক আছে। কিন্তু দু’পক্ষের কাগজপত্র নিয়ে বসা হয়নি।
অধুনালুপ্ত মানিকগঞ্জ -৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খান শান্ত বলেন, আপনার কাছ থেকে প্রথম জানলাম। আমি বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখব, সে যেই হোক আমি কোনো অন্যায় কাজের সঙ্গে নাই।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার ( সিংগাইর সার্কেল) ফাহিম আসজাদ বলেন, অভিযোগ হাতে পেয়েছি আইনগতভাবে যতটুকু করার আমরা সেটা করব। সেই সঙ্গে যাতে আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি না ঘটে সেদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে খেয়াল রাখা হবে ।

Watermark