Header Logo
Author বার্তা বিভাগ - সকালের দেশ এডমিন
তারিখ: ১২ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৯ অপরাহ্ণ

ধর্ষণ বর্তমানে যে প্রচারণা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ৫ আগষ্টের পর থেকেই এরকম ঘটনা ঘটছে -কামরুজ্জামান মুহিত

News Image

স্মৃতিশক্তি যদি আমার সাথে প্রতারণা না করে তাহলে যতটুকু মনে পড়ে ২০১৩-১৪ সালের দিকে এইরকম ধর্ষণজনিত সংবাদে সারাদেশের সংবাদপত্র ভরপুর ছিল কয়েকমাস।প্রধান সংবাদ বা প্রথম/শেষ পাতায় শুধু ধর্ষণজনিত ঘটনার সংবাদে ভরপুর ছিল পত্রিকাগুলো।এরপর ধীরে ধীরে এই জাতীয় সংবাদগুলো পিছনে পড়া শুরু হয় এবং ভিতরের পাতায় ছোট্ট কলামে ছাপা হতে শুরু করে।একসময় দেশের মানুষ এইরকম ঘটনাগুলো যে আমাদের জাতীয় সমস্যা সেটা ভুলে যেতে শুরু করে বা ভুলে যায়।আমি তখন অনার্স কোর্সের ছাত্র ছিলাম।আমার তখন মনে হয়েছিল কোন একটা এজেন্ডা কাজ করছিল কোন এক গ্রুপের মধ্যে। তাদের পিআর এটা কাজে লাগিয়েছিল।আমি এখনও এটা বিশ্বাস করি।

২০১৩-১৪ সালের পর কি দেশে নিয়মিত ধর্ষণের ঘটনা ঘটে নাই? এখন যেরকম মহামারীর মতো ঘটছে তখনও ঘটেছে পত্রিকা গুলো খুঁজে দেখলেই পাওয়া যাবে।তবে সেটা ভিতরের পাতায় ছোট্ট এক কলামের ভিতরে।মাঝেমধ্যে এমসি কলেজের ঘটনাগুলোর মতো কয়েকটা হয়তো প্রধান সংবাদে পরিণত হয়েছিল কিন্তু দলীয় নেতা-কর্মী হিসেবে একটারও সাজা হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নাই। এই সময়ের মধ্যে আমার নিজের এলাকায়ও অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। কিছু সামনে এসেছে বেশিরভাগই ধাপাচাপা দেয়া হয়েছে।

এইবার সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়া এবং মোবাইল সাংবাদিকদের আধিক্যে সকল খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি সহজে চলে এসেছে।আমি কখনই বিশ্বাস করি না এরকম ঘটনা আগে কম ছিল এখন অতি মাত্রায় বেড়ে গেছে।হয়তোবা ১০%-১৫% বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে প্রচারণা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ৫ আগষ্টের পর থেকেই এরকম ঘটনা ঘটছে।আমার প্রশ্ন এই জায়গায়!

মনে প্রশ্ন জাগে হঠাৎ করে ধর্ষণের ঘটনাগুলো এত প্রচারণা পাচ্ছে কেন?এই বিষয়ে আমার নিজস্ব কিছু পর্যবেক্ষণ আছে।১.বর্তমানে যে হারে সোস্যাল মিডিয়া কাজ করে সে ধারাবাহিকতায় এরকম নিউজ খুবই সেনসেটিভ বলে প্রচারণা বেশি হচ্ছে। সাথে কিছু ঘটনা এত নির্মম,হৃদয়বিদারক ও মনুষ্যবিবর্জিত যে প্রায় সবাই এই ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করা থেকে নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না। এজন্য সবাই যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ ও প্রচার করছে যাতে সকল ধর্ষককে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা যায়।২. আওয়ামী লীগের দলীয় এজেন্ডা হিসাবে প্রচারণা।বাংলাদেশ যে গত ১৫-১৬ বছর ভালোই চলেছে এটা বুঝানোর অপচেষ্টা। অথবা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টাও হতে পারে।৩.নির্বাচন নির্বাচন করে করে বিএনপি যে সরকারের মাথা মগজ খেয়ে ফেলছে তাদেরও কাজ হতে পারে।দেশ যে ভালো চলছে না এবং যত তাড়াতাড়ি একটি নির্বাচিত সরকার আসবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তত তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যাবে এটার প্রচারণাও হতে পারে।

আমার ব্যক্তিগত মত হলো ১ অথবা ৩। ২ নাম্বার কারণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। যদিও একদম ফেলে দেওয়ার মতো কারণ নয়। ভালোভাবে প্রচারণার মোটিভ পর্যবেক্ষণ করলে স্পষ্ট হবে প্রকৃত কারন কোনটি।আওয়ামী লীগের নেতাদের যদি একটু হলেও ঘিলু থাকে তাহলে তারা এরকম একটা আইডিয়া নিয়ে সামনে আসার কথা না।ঘিলু আছে কি না সেটা একটা বড় প্রশ্ন! ইউনুস সরকার যতদিন থাকবে আওয়ামীলীগের তত ফায়দা হবে এটা সামান্য পরিমাণে মগজ থাকা লোকও বুঝবে।অন্তবর্তী সরকারে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামীপন্থী, বিএনপিপন্থি,জামায়াতপন্থি ও বাম ঘেঁষা আমলাদের জন্য প্রতিনিয়তই সরকার তাদের কৃতকর্মের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হবে। যা আমরা প্রতিদিনই দেখি। এবং এই কাজগুলোর জন্য ধীরে ধীরে আওয়ামীলীগের প্রতি সাধারণ মানুষের একটু সহজভাব প্রকাশ পাচ্ছে। অতি ধীরে হলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য এটা কার্যকরি হবে।অন্যদিকে বিএনপি সরকারের মাধ্যমে শুধু মাত্র নির্বাচন আয়োজন করানোর জন্য নিজেদের দেওলিয়া ঘোষণা করতে রাজি এরকম আচরণ করছে।সুতরাং এটা তাদের পিআর এর মাধ্যমে হচ্ছে কি না এই প্রশ্নটা বড় আকারে মনে জাগে।

বাংলাদেশ যে হারে হুজুগে সে বিবেচনায় নিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের প্রকাশ হিসেবেও এটাকে বিবেচনা করা যায়।কিন্তু ঘটনা যাই হোক দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে চরম অবনতি ঘটেছে এবং দিনদিন আরো নীচের দিকে যাচ্ছে এমনকি গৃহযুদ্ধের উসকানি পর্যায়ে চলে যাচ্ছে কি না এটা আমাদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

সবশেষে বলতে দ্বিধা নাই প্রচার প্রচারণা যে বা যাদের মাধ্যমেই হোক ঘটনা গুলো অধিকাংশ সত্য এবং এগুলোকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।এটাও খেয়াল রাখতে হবে যাতে ব্যক্তিরোষে কোন নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তি বা বিড়ম্বনায় না পড়েন।আমি দৃঢ়ভাবে চাই ১ম কারণটা হোক এবং আমরা সকলে মিলে সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে এই নরপশুদের বিরুদ্ধে দাঁড়াই।

লেখক: প্রভাষক,পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ,ভাদেশ্বর মহিলা ডিগ্রী কলেজ, গোলাপগঞ্জ, সিলেট।

Watermark